শেখ কামালের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

PIN শেখ কামালের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার জ্যেষ্ঠ পুত্র, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহিদ শেখ কামাল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য উদয় লগ্নে অকুতোভয় বীর সেনানীর মতো এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন তিনি। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে পালন করেছেন অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা। বাংলার তারুণ্যের অহংকার শহিদ শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী আজ।

১৯৪৯ সালের এই দিনে তদানীন্তন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

মাত্র ২৬ বছর বেঁচে ছিলেন শেখ কামাল। তার জীবনের এই অল্প সময়ের মধ্যেই এদেশের মাটি ও মানুষের পক্ষে গড়ে গেছেন অমর কীর্তি, রেখে গেছেন নানা স্মৃতি। একাধারে তিনি যেমন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, তেমনি দেশের ক্রীড়াঙ্গন, সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামেও যথেষ্ট সরব ছিলেন। সরব ছিলেন রাজনীতির মাঠেও। টগবগে এই তরুণ যখন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ গড়ার নতুন যুদ্ধে লিপ্ত, তখনই তাকে ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো। পরিপূর্ণ যৌবন যখন বখতিয়ারের ঘোড়ার মতো ছুটে বেড়াচ্ছিল তার ললাটে, ঠিক সেই সময় নির্মম ঘাতকের বুলেটের আঘাতে প্রাণপ্রদীপ নিভে যায় তার। জাতির পিতার পরিবারের সাথে সাথে শেখ কামালকে হারানো বাঙালি জাতির জন্য অন্যতম এক শোক ও দুঃখের ঘটনা। এক অপূরণীয় ক্ষতি সেদিন হয়েছে শেখ কামালকে হারিয়ে।

বাল্যকাল থেকেই চটপটে ও ডানপিটে স্বভাবের ছিলেন শহিদ শেখ কামাল। যেখানে থাকতেন, চারপাশ মাতিয়ে রাখতেন। শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ অনার্স পাশ করেন তিনি। বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ছায়ানটের সেতার বাদন বিভাগের ছাত্রও ছিলেন শেখ কামাল। স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে সমাজ চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে মঞ্চ নাটক আন্দোলনের ক্ষেত্রে শেখ কামাল ছিলেন একজন প্রথম সারির সংগঠক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে থাকতেন শেখ কামাল। হল বাস্কেট বল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন তিনি। বাস্কেটবলে তার অসামান্য দক্ষতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার হলের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছিল তার থাকাকালীন পুরোটা সময়। এর মাঝে ৬৯ সালে পাকিস্তানী জান্তা সরকার রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করল ধর্মীয় উগ্রতার পরিচয় দিয়ে। কিন্তু শেখ কামালকে কি আর থামানো যায়? বাঙ্গালী জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতার সন্তান তিনি, নেতৃত্বগুণ আর জাতীয়তাবোধের চেতনা তার ধমনীতে জন্ম থেকেই জ্বলছিল। তার প্রতিবাদের ভাষা হল রবীন্দ্র সঙ্গীত, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যেখানে যখনই সুযোগ পেলেন, তখনই বিশ্বকবির গান গেয়ে অসহিংস প্রতিবাদের অসাধারণ উদাহরণ তৈরি করলেন তিনি। তার দেখাদেখি অপারপর যুবকশ্রেণির মুখে মুখেও তখন ঘুরতে লাগলো রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতিবাদ।

এদেশের মানুষের আবহমান সংস্কৃতিচর্চা ও সাংস্কৃতিকবোধের উন্মেষ ঘটানোর উদ্দেশ্যে শেখ কামাল বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘স্পন্দন’ শিল্পীগোষ্ঠী। ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন তিনি। অভিনেতা হিসেবেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল,ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচণ্ড উৎসাহ ছিল শেখ কামালের। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম ক্রীড়া সংগঠন ও আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। শহিদ শেখ কামাল আমৃত্যু আমাদের দেশের নান্দনিক ফুটবল ও ক্রিকেটসহ অন্যান্য দেশীয় খেলার মানোন্নয়নে তার অক্লান্ত শ্রম দিয়ে অপরিসীম অবদান রেখেছিলেন। নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলতেন এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করতেন। ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত, সংগ্রামী ও আদর্শবাদী কর্মী হিসেবে ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন। শাহাদাত বরণের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এমএ শেষ পর্বের পরীক্ষার্থী ছিলেন এবং বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও সংগঠক হিসেবে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শেখ কামালের সক্রিয় উপস্থিতি ছিল সবার জন্য তুমুল উৎসাহব্যঞ্জক। আন্দলনের কর্মীরা সবাই অসম্ভব পছন্দ করতেন তাকে। তিনিও সকলকে মনে করতেন আত্মার আত্মীয়। গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংগঠিত করে মিছিলসহ বটতলায় সমবেত হতেন তিনি নিয়মিত। জাতির পিতার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে কোনো অহমিকাবোধ ছিল না। বিশেষ হয়েও তিনি ছিলেন সর্ব-সধারণের মতোই একজন সাধারণ। সাধারণ হয়েও তিনি ছিলেন অনন্য।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে ‘আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করেন শেখ কামাল। এই সংস্থার নামে সংগঠিত করেন ফুটবল দল ‘ইকবাল স্পোর্টিং’, আর ক্রিকেট, হকির দল ‘ইস্পাহানী স্পোর্টিং’। পরে এসব দলের সমবায়ে নবোদ্যমে যাত্রা শুরু করে ‘আবাহনী ক্রীড়া চক্র’। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি- এই খেলাগুলোতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল কামালের। তার স্বপ্ন ছিল একদিন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ হবে অপরাজেয় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রীড়াশক্তি। সত্যিই তিনি বেঁচে থাকলে সেটা সম্ভব ছিল। স্বপ্ন তার দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয়েছিল বহুদূর। ফুটবলের উন্নতির জন্য ’৭৩-এ আবাহনীতে বিদেশি কোচ বিল হার্টকে নিযুক্ত করেছিলেন তিনি। শুধু ক্রীড়াই নয়, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সব শাখাতেই ছিল তার মুনশিয়ানা ও অসামান্য সংগঠকের ভূমিকা।

দেশের ফুটবলে তো রীতিমত বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন শেখ কামাল। দূরদর্শিতা আর আধুনিকতার অপূর্ব সমন্বয়ে রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন গোটা উপমহাদেশে। ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য বিদেশী কোচ বিল হার্ট কে এনে ফুটবল প্রেমিকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন! তখন ক্লাব তো দুরের কথা, এই উপমহাদেশে জাতীয় দলের কোনো বিদেশী কোচ ছিলোনা। ১৯৭৪ সালে আবাহনী যখন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ‘আই এফ এ’ শীল্ড টুর্নামেন্ট খেলতে যায়, তখন আবাহনীর বিদেশী কোচ আর পশ্চিমা বেশ ভুষা দেখে সেখানকার কর্মকর্তা আর সমর্থকদের চোখ ‘ছানা বড়া’ হয়ে যায়! পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলা আবাহনী ক্রীড়াচক্র দর্শকের অবাক মুগ্ধতা অর্জন করেছিল তাদেও নান্দনিক ফুটবল দিয়ে। আবাহনীর ভুয়শী প্রশংসা করেছিলেন কমল বসু সহ আকাশবাণীর প্রথিতযশা ধারাভাষ্যকার বৃন্দ। শেখ কামাল বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন পুরো উপমহাদেশের ফুটবলে। হকিতে নতুন দিনের সূচনা করেছিলেন তিনি। যোগ্যতা, দক্ষতা এবং দেশপ্রেমের অসামান্য শক্তিতে এই মানুষটা বদলে দিচ্ছিলেন সদ্য স্বাধীন একটা দেশের পুরো ক্রীড়া ক্ষেত্র।

শেখ কামালের ধ্যান-জ্ঞান ছিল ক্রীড়াজীবন। নিজে যেমন ক্রীড়া ও সংস্কৃতি নিয়ে মেতে থাকতেন, বিয়েও করেছিলেন ক্রীড়াজগতেরই এক অনন্য প্রতিভাধর নারীকে। বঙ্গবন্ধুর পূত্রবধু শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকিও ছিলেন একজন ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। ১৯৭৩ সালে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশের জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা। সে দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন সুলতানা কামাল খুকি। ওই আসরে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু সুলতানা কামালকে বললেন, ‘বাঙালির মান রাখতে পারবি তো?’ খুকির সাহসী উত্তর ছিল ‘পারবো’। খুকি ওই আসরে লং জাম্প ইভেন্টে দ্বিতীয় হন। এটাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম কোনও পদক জয়। খুকি দেশে ফেরার পর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বাহবা দিয়েছিলেন। খুকি তখনও বঙ্গবন্ধুর পুত্রবধূ হননি। ’৭৫ এ শেখ কামাল বিয়ে করেন তাকে। মৃত্যুর কিছু দিন আগে ১৯৭৫ সালেও হার্ডলসে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন কামালের স্ত্রী খুকি।

একবিংশ শতাব্দীতে শেখ কামাল এখন স্মরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। শেখ কামালের বিচরণ ছিল প্রধানত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। তার হেঁটে চলা ছিল আবাহনীর মাঠে। তিনি ছিলেন আনন্দের প্রতীক। খেলাধুলার সঙ্গে যে শিশুরা আজ সম্পৃক্ত এবং যারা আবাহনীর মাঠে দৌড়ে বেড়ায় তাদের সজীবতায় মিশে আছে তার নাম। যে সবুজ চত্বরে তিনি হেঁটেছেন খোলা পায়ে সেই ঘাসের আদর মেখে এখনকার প্রজন্ম এগিয়ে চলেছে। তিনি তো সেই প্রাণের প্রতীক যার নিজকণ্ঠের গান ঘুরেফিরে আসে স্মৃতিকাতর বন্ধুজনের কানে।

দেশ স্বাধীনের পর কুচক্রী মহল শেখ কামালের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করেছিল, যা ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অপপ্রচারকারীদের কটুকথায় শেখ কামালের কীর্তি ও অবদান এতটুকুও ম্লান হয়ে যায়নি বরং আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। স্বার্থান্বেষী মহল যত বেশি তাকে নিয়ে অপপ্রচার করতে চেয়েছে, তিনি তত বেশি হয়ে উঠেছেন তারুণ্যের অহংকার। বাংলার যুবসমাজ এখনো তার জীবন ও কর্ম থেকে প্রেরণা খোঁজে, তার তারুণ্যে উদ্বীপ্ত হয়, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি অঙ্গণে তার মতো নিবেদিত ব্যক্তিত্ব এখনো খুঁজে পাওয়া ভার।

অন্যদের ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া অন্যতম ও স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ছিল শেখ কামালের। জাতির পিতার সন্তান হয়েও তিনি সাধারণ মানুষের মতো জীবন-যাপন করতেন, একই শার্ট বারবার পরতেন, বিলাস-ব্যসন পরিত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নাটক ও গান নিয়ে মেতে থাকতেন। শেখ কামাল ছিলেন উদ্দীপ্ত যৌবনের দূত ও পরোপকারী ব্যক্তিত্বের পুরোধা। ত্রিশের কোঠা পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি এদেশের মানুষের কাছে আদর্শের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। যারা তার সান্নিধ্যে এসেছেন তারা অনুভব করেছেন তাঁর স্নিগ্ধ ও হাস্যোজ্জ্বল তারুণ্য। খেলার মাঠ থেকে নাটকের মঞ্চ, সঙ্গীত জগত আর সভা-সমাবেশে তিনি আলোড়ন তুলেছিলেন। তরুণদের মধ্যে নতুন প্রতিভা দেখলে কাছে টেনে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিচয় করিয়ে দিতেন।

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্লাবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে সাংগঠনিক দায়িত্বে নিয়োজিত করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন প্রণয়ন করেন তিনি। তাঁর উদ্যোগেই বাংলাদেশের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর স্বীকৃতি ও অনুমোদন লাভ করে। আর তাকে অনুসরণ করা তার জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ কামাল নেতা হতে না চেয়েও হয়ে ওঠেন একজন পথিকৃত। বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক জগতে শেখ কামালের অবদান কখনো ভুলবার নয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নির্দয় ঘাতক দলের নির্মম ব্রাশফায়ারে শহিদ হওয়ার আগের মাসে বিয়ে করেছিলেন শেখ কামাল। রূপকথার চেয়েও অসম্ভব সুন্দর তাদের ভালোবাসার পরিণয় স্থায়ী হয়েছিল মাত্র একমাস। ক্রীড়াব্যক্তিত্ব সুলতানা কামাল খুকিকে বিয়ের পর তাদের গা থেকে বিয়ের হলুদের ঘ্রাণ মুছে যাওয়ার আগেই সপরিবারে শহিদ হন তারা। মাত্র ২৬ বছরের অতি ক্ষুদ্র জীবন লাভ করলেও, সেই জীবনকেই অসামান্য সব কর্ম দিয়ে সাজাতে সক্ষম হয়েছিলেন শেখ কামাল। মাতৃভূমির ইতিহাসের অন্যতম সূর্যসন্তান হিসেবে নিজেকে চিনিয়ে গিয়েছিলেন অসম্ভব বিনয় আর সারল্যে।

শহীদ শেখ কামাল বাংলাদেশের এক অনন্য ক্রীড়া সংগঠক, এক প্রতিভাধর সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক। তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে একজন ক্রীড়া সংগঠক, ক্রীড়াবিদ, সংস্কৃতিমনা প্রচণ্ড সম্ভাবনাময় মানুষকে হারিয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে যে অপূরণীয় ক্ষতি, যে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের হৃদয়ে, তা আর কখনোই সেরে উঠবার নয়। তাঁর জন্মদিনে আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করি। তার প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা জানাই।