শুভ জন্মদিন প্রিয় ‘হাসুমণি’

PIN

১৯৪৭ সাল। ভারত কেবল ভাগ হয়েছে। সমস্ত ভারত জুড়ে সবার মধ্যে কেমন যেন চাপা উদ্বেগ। পিতা শেখ মুজিব তখন কলকাতায়। ভারত ভাগের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দাঙ্গা প্রতিরোধ এবং লেখাপড়া নিয়ে মহাব্যস্ত। দম ফেলানোর সময় নেই। দাঙ্গা হামলায় দেশের চারদিকে যেন ক্রমশই অন্ধকার নেমে আসছে। এমন সময় খবর এলো মাতা ফজিলাতুন্নেসার কোল আলোকিত করে জন্ম নিয়েছে ছোট্ট কন্যা সন্তানের। দাদা নাম রেখেছেন হাসিনা। মেয়ের জন্মের খবর পেয়ে বঙ্গবন্ধু হঠাত্ বাড়ি এসে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে ‘হাসুমণি’ ডেকে আনন্দে আত্মহারা হয়ে কপালে চুম্বন এঁকে দিলেন। সে দিনই তার ভাগ্যের লিখন তৈরি হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর সেই আদরের নয়নমণি ছোট্ট ‘হাসুমণি’ একদিন বড় হয়ে বাংলাদেশের জনগণের প্রিয় নেত্রী হয়ে উঠলেন এবং ধীরে ধীরে বিশ্ব-নেত্রীর মর্যাদায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর সেই ছোট্ট “হাসুমণির” জন্মদিন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব-নেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন…।

বঙ্গবন্ধুর সেই ছোট্ট হাসুমণির আজকের এই জননেত্রী হয়ে উঠার পথটা কোনো সময়ই মসৃণ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর এনে দেওয়া এই ছোট্ট ভূখণ্ডে তাঁরই মেয়েকে বারবার সম্মুখীন হতে হয়েছে চরম নির্মমতার। ’৭৫-এ গোটা পরিবারকে নির্মম ভাবে হত্যা করে এতিম করে দেয় ঘাতকের দল। তাঁর এমনই দুর্ভাগ্য যে পরিবারের কারো মৃত দেহ শেষবারের মত দেখতে পারা তো দূরের কথা, ছোট বোন রেহানাকে সাথে করে তাঁকে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি, এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরতে হয়েছে নিজের জীবন বাঁচাতে। ’৭৫-এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরে নিজের মাতৃভূমি বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। কিন্তু সকল বাঁধা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালে তিনি যখন দেশে আসলেন তখন থেকেই ’৭৫-এর কালরাত্রির সেই হায়েনার দোসরেরা আবার নতুন করে চক্রান্ত শুরু করে। একের পর এক ছক কষতে থাকে খুনিচক্র। প্রথম আঘাতটি আসে ১৯৮৭ সালে। ৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচার বিরোধী অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে সচিবালয়ের সামনে তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ কর্মী নূর হোসেন মারা যান। থেমে থাকেনি ঘাতক চক্র। তারা একের পর এক আঘাত করতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নয়নমণি ‘হাসুমণি’র উপর। বাংলাদেশে শেখ হাসিনাই একমাত্র ব্যক্তি যাকে মোট ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে! কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে? পরম করুণাময় আল্লাহ্র অশেষ মহিমায় তিনি আজ শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন গোটা বিশ্বে একজন বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সীমাহীন উদারতা, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে পরিণত করেছে এক আধুনিক ও সফল রাষ্ট্রনায়কে। হয়ে উঠেছেন একবিংশ শতাব্দীর রোল মডেল, দিন বদলের কাণ্ডারি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। পরিণত হয়েছেন দেশের আপামর জনসাধারণের একমাত্র এবং সর্বশেষ ভরসাস্থল।

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জননেত্রী শেখ হাসিনা এক মূর্তিমান আতঙ্কের প্রতীক। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর জিরো টলারেন্স নীতি গোটা বিশ্বে আজ প্রশংসনীয়। ২০০৮ সালের দিন বদলের সনদে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ১০ টাকা কেজি চাল দিবেন। এবার সেই প্রতিশ্রুতিও পূরণ করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।  জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব পরিকল্পনা পৃথিবী জুড়ে প্রশংসিত হয়েছে যা বর্তমানে নানা উন্নত দেশে অনুকরণীয়। তারই ফলে তিনি চ্যাম্পিয়ন অফ দ্যা আর্থ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি তরুণদের মাঝে প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করেছেন। ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য এ দেশ বাসোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছেন যেখানে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান ছাড়াও সৃজনশীলতা বিকাশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।  বঙ্গবন্ধুর নয়নের মণি, তাঁর পরম আদরের সেই ছোট্ট ‘হাসুমণি’ আজ গোটা দেশের নয়নের মণিতে পরিণত হয়েছেন। ঐ দূর আকাশের কোন নক্ষত্র থেকে কি বঙ্গবন্ধু তাঁর সেই ছোট্ট নয়নের মণিকে আজও দেখেন? তিনি কি দেখেন, তাঁর অসমাপ্ত কাজ, বাংলাদেশ নিয়ে অসমাপ্ত স্বপ্নগুলোর একে একে বাস্তবে রূপান্তরিত করে যাচ্ছেন তাঁর চিরদুঃখী প্রিয় হাসুমণি?

অবশ্যই তিনি দেখছেন, আর প্রাণ ভরে দোয়া করে বলছেন—“এগিয়ে যা মা, এগিয়ে যা আমার নয়নের হাসুমণি। শুভ জন্মদিন তোকে”।