ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে চাই নারী নেতৃত্ব

PIN ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে চাই নারী নেতৃত্ব

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, দেশের ইতিহাসে বীরত্ব গাঁথা একটি সংগঠন। আর দুদিন পরেই বাংলাদেশের ছাত্রদের তথা উপমহাদেশের বৃহত্তম ও জাতির পিতার নিজ হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই সংঠনের সম্মেলন ঘিরে তৈরি হয়েছে এক ধরনের উৎসবের আমেজ। এই ছাত্র সংগঠনটির প্রতি সারাদেশের মানুষের রয়েছে আলাদা আগ্রহ। কেন না জাতির ইতিহাসে প্রত্যেকটি অর্জনের সঙ্গে এই সংগঠনের নাম জড়িয়ে আছে। তাই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস’।

নতুন নেতৃত্ব সময়ের সঙ্গে তাল রেখে সংগঠনের নীতি-আদর্শকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধরে রেখে নতুন প্রজন্মকে একটি সুন্দর দিক নির্দেশনা দেবে। আর কেন্দ্র থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রতিটি নেতা-কর্মীকে আগলে রাখবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে যাবে আমরা এই আশাটুকুই করি।

ছাত্রলীগের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, মানুষের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে, বন্যা কবলিত, ঘূর্নিঝড় কবলিতসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে ছিল ছাত্রলীগ। আবার সাম্প্রতিককালে আমরা দেখেছি রোহিঙ্গাদের পাশে প্রতিদিন খাদ্য ও চিকিংসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তথ্যমতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ৩৮ থেকে ৪০টি বা তারও বেশি দিবস পালন করে থাকে। তার সঙ্গে মানবতার সেবাই কাজ করে যাচ্ছে।

সংগঠনটি যেহেতু ছাত্রলীগ, তাই তাদের কাছে আমাদের চাওয়ার শেষ নেই। এবারের সম্মেলনে আমরা সংগঠনে কিছু সময়োপযোগি পরিবর্তন চাই। আমরা চাই- অধিকার বঞ্চিত দেশের মফস্বলের ছাত্রদের দিকে এবার বিশেষভাবে মনোযোগ দিক ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া সকল সুযোগ সুবিধা যেনো তারা পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত ছাত্রলীগের। তাদের কাছে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসও তুলে ধরার কাজ করতে হবে ছাত্রলীগকে। ছাত্রলীগকে দেখে যেন নতুন প্রজন্ম রাজনীতিতে আগ্রহী হয় সেভাবেই চলতে হবে ছাত্রলীগকে। এ জন্য দরকার তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্বে গঠনমূলক পরিবর্তন। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে যাতে ছাত্রলীগের মেধাবী, জনপ্রিয় ও চরিত্রবান ছাত্ররা নেতৃত্বে আসতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে পাঠকর্মসূচির ব্যবস্থা থাকতে পারে, নিজেরা নিজেরা বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কুইজ প্রতিযোগিতা, গল্প বলা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা, বঙ্গবন্ধুকে জানা এসব কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ উৎসাহিত হবে ছাত্রলীগে। বর্তমানে নেশা একটি মারাত্মক সামাজিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। এই সমস্যা মোকাবেলায় ছাত্রলীগকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ছাত্রসমাজ তথা তরুণসমাজ যাতে নেশার দিকে গিয়ে বিপথগামী না হয় সে উদ্দেশ্যে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে ছাত্রলীগকেই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব ক্ষেত্রেই নারীদের অগ্রাধিকার দিয়েছে। তবে এবার সময় এসেছে ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের সমৃদ্ধ ইতিহাসে নারী নেতৃত্ব দিয়ে সমৃদ্ধির আরেকটি পালক যোগ করার। মেধা, যোগ্যতা, আস্থাভাজন, নেতৃত্বগুণ থাকলে একজন নারীও বৃহৎ এ সংগঠনটির শীর্ষ পদে আসতে পারেন। তাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের অন্তত একটিতে নারী নেতৃত্ব এখন সময়ের দাবি।

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই, তারা বিমান চালাচ্ছে, গবেষণা করছে, বড় বড় আবিষ্কার করছে। দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে। সম্প্রতি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নারী নেতৃত্বে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিকভাবে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার লাভ করেছেন। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে দিচ্ছেন যিনি তিনি একজন নারী।

এ ছাড়াও দেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, মহান জাতীয় সংসদের সম্মানিত স্পিকার নারী। রাজনীতির সকল শাখায় এখন নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্ত্রী ছিলেন নারী। তারা সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন নারী যখন ছাত্রলীগের কোনো শীর্ষ পদের দায়িত্বে থাকবে তখন সে আর নিজেকে নারী হিসেবে চিন্তা করবে না।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বৃহৎ সংগঠন। এতো বড় একটা সংগঠন তার ভিতরে কিছু ভুল ত্রুটি আছেই । আশা করি ভবিষৎতে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকবে না কোনো টেন্ডারবাজী, খুন বা হত্যায় জড়িত এমন কোনো ব্যক্তি। সংগঠনে ভাল কাজের সুনাম যেমন থাকবে তেমনি যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় থাকবে বদ্ধপরিকর এবং থাকবে স্বচ্ছ জবাবদিহিতা। ছাত্রলীগের প্রতি যে জিনিসগুলি আশা করে মানুষ তা হলো ভাইমুক্ত ছাত্রলীগ, প্রভাবমুক্ত এক আদর্শিক ছাত্রলীগ।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছাত্রলীগ চাই। যারা আগামী প্রজন্মকে সঠিক নেতৃত্ব দেবে।