মঙ্গা নামক শব্দটি এখন ইতিহাস

PIN মঙ্গা নামক শব্দটি এখন ইতিহাস

উপমহাদেশের প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহত্ রাজনৈতিক দলের নাম আওয়ামী লীগ। দলটি বর্তমানে ক্ষমতাসীন। এই রাজনৈতিক দলটির গোড়াপত্তন হয় ২৩ জুন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করা দলটি মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী। এ দলটি ৬৯ বছর শেষ করে ৭০ বছরে পদার্পণ করেছে। এ দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ, জাতীয় চার নেতার আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ, শোষিত, খেটে খাওয়া মানুষের আওয়ামী লীগ এবং দেশের বিপুল মানুষের আওয়ামী লীগ-এর ব্যাপ্তি আসলে বিশাল। জনসংখ্যার কারণেই বিশ্বের যেকোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তুলনায় আওয়ামী লীগের সমর্থকগোষ্ঠী বেশি বৈ কম হবে না। স্বাভাবিকভাবেই এরকম একটি বিশাল ও বিস্তৃত রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতি দেশের মানুষের আশা ও আকাঙ্ক্ষার পরিধিও হয় ব্যাপক ও বিস্তৃত।

দীর্ঘ উত্থানপতনের ধারাবাহিকতায় দলটি এখন নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় আছে এবং এবারই তারা সবচাইতে দীর্ঘসময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট সরকার বর্তমান সময় পর্যন্ত সেই অঙ্গীকার পূরণে কতটুকু সফল হয়েছে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ দরকার। কারণ তারা একটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, অনেক আশাবাদ নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। তার আগের রাষ্ট্রীয় ইতিহাস ছিল কলঙ্কিত। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী, এমপি এবং দলীয়/অঙ্গ/সহযোগী সংগঠনের দুর্নীতি, দৌরাত্ম্য দেশবাসীর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। জোট সরকারের পাঁচ বছরের শাসনামলের পাঁচ বছরই টিআইবির রেটিংয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছিল। উল্লেখ্য, দেশ পরিচালনায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতা, অদক্ষতা, দুর্নীতি, দলীয়করণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকেই উল্টে দিয়েছিল। দেশের যে বিশাল সম্ভাবনা ছিল তাও ধূলিসাত্ হয়ে যায় ঐ আমলে।

এরকম এক ধ্বংসযজ্ঞের পরে ক্ষমতায় আসা ৬৯ বছরের আওয়ামী লীগের কাছে সাধারণ মানুষ যা আশা করে তা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে এমন বিশ্লেষণ অনেক বিস্তারিত হবে। তবে খোলা চোখে আমরা যা দেখি তা হলো— একসময় দেখতাম, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটতো বড় একটি জনগোষ্ঠীর। অধিকাংশ অঞ্চল ছিল বিদ্যুত্হীন— অন্ধকারাচ্ছন্ন। কাঁচা রাস্তায় চলাচল ছিল মানুষের কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ঘরবাড়ি ছিল মাটির দেয়াল অথবা পাটখড়ি বা বাঁশের বেড়া আর খড়ের ছাউনিতে তৈরি। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের সেই চিত্র আর নেই। বর্তমান সরকারের নয় বছরেই পাল্টে গেছে দেশের সার্বিক দৃশ্যপট। অধিকাংশ বাড়িঘর দাঁড়িয়ে আছে ইট-সিমেন্ট অথবা টিনের ওপরে। শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের বাড়িতে জ্বলছে বিজলি বাতি। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা গ্রামাঞ্চল থেকে প্রায় বিতাড়িত হয়েছে বললেও ভুল হবে না। মঙ্গা নামক শব্দটি এখন ইতিহাস। বন্যা নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগের নজিরবিহীন ভোগান্তির কথা মানুষ ভুলেই গেছে। হাওর-বাঁওড়ের লোকজন মহাখুশি।

১৯৭৪ সালের ২৫ ডিসেম্বরে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে হলে দেশবাসীকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উত্পাদন বাড়াতে হবে। কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, চরিত্রের পরিবর্তন না হলে এ অভাগা দেশের ভাগ্য ফেরানো যাবে কিনা সন্দেহ। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও আত্মপ্রবঞ্চনার ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের সবাইকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধি করতে হবে।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সব কাজে আত্মশুদ্ধি ও চরিত্রনিষ্ঠার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে আসছেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সে আলোকে আইন-কানুন, নিয়মনীতি, পরিকল্পনা ও বিভিন্ন কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন অব্যাহত আছে; দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কেবল রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতি, আইন-কানুন প্রণয়ন ও প্রয়োগই যথেষ্ট নয়; তার জন্য সামগ্রিক এবং নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের দুর্নীতি প্রতিরোধে ও রাষ্ট্রপরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানই অনন্য।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সংগ্রামের চালিকাশক্তি ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাজের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ আর জঙ্গিপনার হয়েছে সলিল সমাধি। হলি আর্টিজানের মতো নির্মম ঘটনা কল্পনার বাইরে। সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ দমনে বিশ্বের বহু দেশ বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছে। আমাদের কৌশল কাজে লাগিয়ে তারা সফলও হচ্ছে। আমাদের পুলিশ-র্যাব-গোয়েন্দারা কীভাবে এত দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গি দমন করেছে, তা নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে বিদেশে। অতিসম্প্রতি একটি অনন্য শক্তি যুক্ত হয়েছে জাতির মননে ও দেশ গড়ার প্রত্যয়ে। ‘পদ্মা সেতু নিজেরাই স্থাপন করব’— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণার পথ ধরে জাতির আত্মমর্যাদার যে উদ্বোধন ঘটেছে— এদেশের মানুষের আত্মশক্তির বিকাশে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ পারে— এই প্রত্যয়ের বারতা দেশের মানুষের মধ্যে যত প্রচারিত হবে ততই তারা নিজ প্রচেষ্টায়, নিজ উদ্যমে এগিয়ে যেতে, দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখতে উদ্বুদ্ধ হবে।

ইতোমধ্যে গ্রামীণ মানুষের মধ্যেও আত্মশক্তির এরূপ বিকাশ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের কারণে অনেক আগেই স্বপ্নের আকাশে সুপ্ত থাকা প্রত্যাশার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হতে চলেছে।