সারা রমজানই দ্রব্যমূল্য ছিল সহনীয়

PIN সারা রমজানই দ্রব্যমূল্য ছিল সহনীয়

পবিত্র রমজান মাস প্রায় শেষ। বাংলাদেশ সহ মুসলিম বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই-বোনেরা মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করার উদ্দেশ্যে ঘরে ফিরছেন। আপনজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে তারা প্রস্তুত পুরোদমে।

এবার একটি ব্যাপারে দেশবাসীর নজর কেড়েছে। প্রতিবার রমজান মাস আসলেই আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার এক প্রবণতা দেখা যায়। পৃথিবীতে মনে হয়, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে এরকম বিশেষ মাস ও অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। আমাদের দেশে পণ্যের দাম এমনভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয় যা ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় প্রায়ই। অনেকেই বলে থাকেন এসময় চাহিদা বাড়ে তাই দাম বেড়ে যায়, তবে তা সত্য নয়। কারণ চাহিদার বিপরীতে এসময় প্রচুর মজুদ থাকে বাজারে। এসময় পণ্যের দাম বেড়ে যায় অসাধু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কারণে। ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ করে রেখে কৃত্রিম ভাবে দাম বাড়িয়ে দেন। যা বাংলাদেশে দীর্ঘকাল থেকে যেন এক নিয়মে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া এসময় আরেকটি ব্যাপার লক্ষ করা যায়, খাদ্যপণ্যে ভেজাল। রমজান মাসে মানুষ নানা ধরনের খাবার কেনাকাটা করে। আমাদের সারাবছরের খাবারের মেন্যুও এ মাসে কিছুটা পাল্টে যায়। খাবারের মেনুতে যুক্ত হয় নতুন কিছু আইটেম। ঠিক এই সুযোগ নিয়েই এই সময় খাবারে ভেজাল মেশানোর অসাধু চর্চাও বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।

এবার রমজানে এই দুই সমস্যায় লাগাম পরাতে সক্ষম হয়েছে সরকার। প্রতিবার দ্রব্যমূল্যের যে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি দেখা যেত এবার তা দেখা যায়নি। রমজানের আগে থেকেই বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার যে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল তার ফল পাওয়া গেছে রমজানে। এছাড়াও খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান পুরো রমজান মাস জুড়েই চালিয়েছে সরকার। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ভেজাল খাদ্য জব্দ করেছে এবং জরিমানা আদায় ও মামলা দিয়েছে। এতে দুটি কাজ হয়েছে। ভেজাল খাদ্যের অসাধু ব্যবসায়ীরা যেমন শাস্তি পাচ্ছেন, আবার একই সঙ্গে ক্রেতারাও সচেতন হচ্ছেন। আমরা যেসব নামকরা প্রতিষ্ঠান চিনতাম, এসব অভিযানের কারণে তাদেরও আসল রূপ প্রকাশ হয়েছে। এতে ক্রেতারাও সতর্ক হচ্ছেন।

তবে আমাদের মতো ভোক্তাদের দাবি, এমন অভিযান সারা বছর চালাতে হবে। কারণ অসাধু ব্যবসায়ীরা সারাবছরই অতিরিক্ত মুনাফার আশায় অসাধু পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। তাই সারাবছরই এরকম অভিযান চালু থাকা উচিত। এছাড়াও এসব কালোবাজারি, মুনাফাখোর অসাধু ব্যবসায়ীকে শুধু জরিমানা করলেই হবে না, তাদেরকে মামলা দিয়ে কঠোরভাবে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে আর অসাধু পন্থা অবলম্বন না করে। তাদের লাইসেন্স বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জরিমানার অর্থের পরিমাণও বাড়াতে হবে, যাতে তাদের ব্যবসায় এর প্রভাব পড়ে। কারণ, ভেজাল খাদ্য ক্রয় করে ভোক্তারা শুধু প্রতারিতই হন না বরং তাদের স্বাস্থ্যের ওপর যে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এতে আমাদের জাতির স্বাস্থ্যই হুমকির মুখে। একটি সুস্থ সবল জাতি গড়তে মানসম্মত খাবারের বিকল্প নেই। এছাড়াও ভেজাল খাদ্য খেয়ে অনেকেই মারা যায় এরকম ঘটনাও শোনা যায় অহরহ। তাই খাদ্যে ভেজাল শুধু আর্থিক লাভক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এর সঙ্গে জড়িত আছে আমাদের ভবিষ্যত্ও।

সব মিলিয়ে আমি বলব, এবারে সরকার যেভাবে বাজার মনিটরিং করে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ও ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধ করেছে তা আমাদেরকে আশান্বিত করেছে। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। খাদ্যপণ্য আমদানি অনেকটাই কমে গেছে। তবুও কিছু সিন্ডিকেট খাদ্য মজুদ করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে যাতে সরকার বেকায়দায় পড়ে। খাদ্য উত্পাদন বাড়ানোর এই সফলতাকে মানুষের কাছে পুরোপুরি পৌঁছে দিতে সরকারকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার এরকম উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে।

এবারের মতো ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকুক এটাই আমাদের কামনা। এবার বাজার মনিটরিং করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে ধন্যবাদ না দিলেই নয়। আশা করা যায়, এবারের মতো প্রতিবারই এরকম বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সচেতন থাকবেন।