বাংলাদেশকে দেবার মত ম্যাডাম খালেদা জিয়ার কিছুই নেই

PIN বাংলাদেশকে দেবার মত ম্যাডাম খালেদা জিয়ার কিছুই নেই

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই দেশের রাজনীতিতে বইতে শুরু করেছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকার দলীয় এমপিরা যার যার এলাকায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আগাম এ নির্বাচনী প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই জাপা চেয়ারম্যান এরশাদও। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই তিনি ৫৮ টি দল নিয়ে ঘোষণা করেছেন সম্মিলিত জাতীয় জোট। সবাই যখন নির্বাচনের রেসে  কৌশল  নির্ধারণে ব্যস্ত, ঠিক তখনই রেসের ট্র্যাকে যোগ দিলেন গতবারের ট্রেন মিস করা প্রাক্তন বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া!

ম্যাডাম জিয়ার প্রস্তাবিত ভিশন ২০৩০ এ কি ছিল, কিভাবে ছিল, বা তার অসংলগ্ন চিন্তা ভাবনা গুলো আসলে কতটা যৌক্তিক এ ব্যাপারে জানতে গিয়ে শুনলাম যে তার প্রোগ্রামের দিন সাংবাদিকরা অনেকেই বসার জায়গাই পায়নি। শুধু তাই না, অনেকে তার ভাষণের একটি কপিও পায়নি। তার উপরে বিএনপির নিজেদের নেতাকর্মীদের দলীয় কোন্দল ও হট্টগোল ছিল সর্বত্র। যাই হোক, ভিশন ২০৩০ এর পরিকল্পনা দিতে গিয়ে মাড্যাম মাথাপিছু আয় ৫০০০ ডলার বলতে গিয়ে ৫০০ ডলার বলে ফেলেছেন। এইসব নিউজ একটু চটকদার বা হাস্যরসের খোরাক যোগায়।

বিএনপির ভিশন ২০৩০ এ নতুনত্ব খুব বেশি কিছুই নেই। ৩৭ টি ধারার মধ্যে উপধারা গুলি যা আছে তাতে আওয়ামী লীগ সরকার পূর্বেই ভিশন ২০২১ এবং ২০৪১ এর মধ্যেই সব দিয়ে দিয়েছে। ম্যাডাম জিয়া তার ভিশনে মানুষের মাথা পিছু আয় ৫০০০ ডলার এর কথা বলেছেন কিন্তু বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যেই চূড়ান্ত ভাবে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে জাতিসংঘের অনুমোদন পাবে। বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টর এর উন্নয়ন করার কথা বলেছেন। যা ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকার অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। তিনি ত্রিজি চালু করার কথা বলেছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এর বর্তমান সময়ে ত্রিজি অনেকদিন আগে থেকেই চালু হয়েছে এবং খুব তাড়াতাড়ি ফোরজি চালু হচ্ছে। আউট সোর্সিং থেকে তরুণরা নিজেদের ঘরে বসে আয় করছে এবং তাদের সেই অর্জিত অর্থ সহজে দেশে নিয়ে আসতে ইতোমধ্যেই পেপালের সাথে সোনালি ব্যাংকের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে।

বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিভিন্ন স্তরে উপবৃত্তি সব আওয়ামী লীগ সরকার বাস্তবায়ন করেছে। বিনামূল্যে শিক্ষা নিশ্চিত করেছে। বই উৎসবের মতো অভিনব একটি ট্রেন্ড চালু করেছে সরকার। কৃষিতে এখন আর সার এর জন্য কৃষককে গুলি খেয়ে মারা যেতে হয় না। সব জেলা পর্যায় থেকে উপজেলা, ইউনিয়ন, ও থানা পর্যায়ে তথ্য সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন যে কেউ ইন্টারনেট এর মাধ্যমে সব তথ্য জানতে পারছে। ম্যাডাম সরকারে থাকাকালীন সময়ে সাবমেরিন কেবলের সাথে যুক্ত হতে পারলে বাংলাদেশ এখন আরও অনেকদূর এগিয়ে যেত। বিচার বিভাগ আলাদা এখন। স্বাধীনভাবে সবাই এখন কথা বলতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। পররাষ্ট্র ব্যবস্থা অন্য সরকারের তুলনায় অনেক এগিয়ে।

ম্যাডামের ভিশন ২০৩০ এ আসলে নতুনত্ব কিছুই নাই। তবে, “করা হবে” অনেক আছে। কিন্তু বিগত দিনে কি কি করা হয়েছে তার কিছুই নেই। মূলত ভিশন ২০৩০ হচ্ছে ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১ এর একটি সংক্ষিপ্ত রূপ, এর বেশি কিছুই না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর এবং তার আগে সমগ্র বাংলাদেশকে একটি “বার্ন ইউনিট” বানিয়ে রেখেছিলেন তিনি এবং তার জোট জামায়াতসহ অন্যান্য দল গুলো। গোটা বিশ্ব দেখেছে কি কি বিভীষিকা তিনি তৈরি করেছিলেন। আগুনে দগ্ধ মানুষের মুখ আর আহাজারি তার বা তাদের দোসরদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি।

সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৭ এর এপ্রিলের দিকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইজে) একাংশের প্রতিনিধি দল তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি বলেন, “৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি জোটের আন্দোলন স্থগিত করা ভুল ছিল”। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে খুব অবাক হয়েছি। কী ধরনের নেতৃত্ব তার! বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের জন্য কি তার কোন মাথা ব্যথা নেই? উনি কি তা বুঝতে পারেন না বা সেই অনুভূতিটুকু কি তার নেই যে এতে করে তার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে কি ধারণার সৃষ্টি হয় বা হবে? একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি কি ভাবে এমনটা বলতে পারে বা ভাবতে পারে? তিনি ওই সময়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার কথা বলেছিলেন। অথচ নির্বাচন কমিশনের অধীনে ১ম নির্বাচন করেন বাগাইছড়িতে, দুর্গম পাহাড়ি এলাকাতে। এই নিয়ে মিডিয়াতে বা সামাজিক মাধ্যমে কথা কম হয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন এর উদাহরণ কুমিল্লা। তারপরেও তার বায়না শেষ হয় না। ওনারা নির্বাচনে যাওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। প্রার্থী সিলেকশন ইউনিয়ন, ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সব কমিটি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন।

নির্বাচনের জন্য তাদের প্রস্তুতি, বাংলাদেশের সাধারণ ভোটারদের কাছে একটি আনন্দের কথা। কারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ সবাই করুক ও প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে হোক সবাই তাই চায়। সবচেয়ে লজ্জাজনক ব্যাপার যখন তিনি বিদেশিদের দোহাই দিয়ে বলেন “বিদেশিরা মানবে না” এবং এই বলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর কথা বলেন। এই দেশকে নিয়ে যত ষড়যন্ত্র করা হয়েছে তাতে কাদের সরাসরি ভূমিকা আছে তা দেশের মানুষ সবাই জানেন। এই বিদেশিদের সাথে ষড়যন্ত্রের কারণে আমরা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা কে হারিয়েছি। আমাদের অগ্রগতি থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছিলাম। “পদ্মা সেতু তার জ্বলন্ত প্রমাণ। তিনি বলেছিলেন পদ্মা সেতু হবে না । আর তারা ক্ষমতায় গেলে পদ্মা সেতু ৩/৪ টা হবে। কিন্তু পদ্মা সেতু নিজেদের দেশের টাকায় তৈরি হচ্ছে এবং তা এখন দৃশ্যমান।

একজন নেতার বক্তব্য যখন এমন হয়, তখন জাতি তার কাছে আর কিছু প্রত্যাশা করে না। ম্যাডাম বার বার তার বক্তব্যে সেনাবাহিনীকে টেনে এনে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ জানে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কিভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাই তার এই সমস্ত মনগড়া কথার কোন ভিত্তি ও গুরুত্ব নেই। “যা ছিল সব বিক্রি করে দিয়েছে সরকার ভারতের কাছে “ , ১৯ শে এপ্রিল দৈনিক ইত্তেফাকের একটা রিপোর্ট ছিল এই রকম সাথে সব দৈনিকেও একই নিউজ ছিল। এটা সত্যিই বোধগম্য নয় যে, বিক্রি হওয়া দেশে তিনি রাজনীতি করছেন কিভাবে? একটা দেশ কতবারই বা বিক্রি হতে পারে? এই সরকার খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দেশের হাল ধরেছিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যার কঠিন দৃঢ়তায় আজ আমরা একটা লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। জাতির জন্য তিনি একটি দিক নির্দেশনা দিয়েছেন যা ভিশন ২০৪১ নামে পরিচিত। এর আগে কোন সরকার জাতির সামনে এমন দিক নির্দেশনা দিতে পারেনি। আর বিএনপি তো এভাবে চিন্তাই করেনি।

আজ বাংলাদেশের আনাচে কানাচে উন্নয়নের ছোঁয়া। প্রতিটি খাতে সরকার তার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজাই রেখে এগিয়ে চলেছে। সারা বিশ্ব যখন জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে তখন জননেত্রী শেখ হাসিনা তার সুদৃঢ় হাতে তা মোকাবেলা করছেন। বাংলাদেশকে তিনি পৃথিবীর কাছে রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। অন্যদিকে, ম্যাডাম জিয়ার আমলে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল মিনি-পাকিস্তানে, যেখানে প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও বোমা ফুটতো। দুর্নীতি আর লুটপাটে দেশ হয়েছিল চার চার বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। খাদ্য ঘাটতি, সারের ঘাটতি, বিদ্যুৎ ঘাটতি… পানির দাবিতে শহরবাসী হাঁড়িপাতিল নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল। আজকে ২০১৭ সালের বাংলাদেশের সাথে সেই ২০০৪/২০০৫ এর বাংলাদেশের বিস্তর পার্থক্য যা দৃশ্যমান। শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। খালেদা জিয়া যে কপি-পেস্টের ভিশন ২০৩০ দিয়েছেন সেগুলো ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পূরণ করে ফেলেছে। আর তাই, বাংলাদেশের মানুষকে দেবার মত ম্যাডাম খালেদা জিয়ার আর কিছুই নেই।